চিঠি
অলোক চৌধুরী
মায়ের চিঠি
আমার স্নেহের রত্না,
অলোক চৌধুরী
মায়ের চিঠি
আমার স্নেহের রত্না,
আজ আমি তোকে প্রথম চিঠি লিখছি। আমার এই প্রথম আর
শেষ চিঠি। বেশ কিছুদিন থেকেই
আমি অসহ্য মানসিক যন্ত্রণায় দগ্ধ হচ্ছিলাম। আর পারলাম না। আমি তোকে মিথ্যা
বলতে শেখাইনি, সব সময় সত্যি বলতে শিখিয়েছি। অথচ আমি নিজেই একটা
মিথ্যার উপর বসে আছি।
তুই একদিন আমায়
জিজ্ঞাসা করেছিলি, মা, তোমার কি শরীর খারাপ ? তখন
আমি বড়ই মনঃকষ্টে ভুগছিলাম রে । কিন্তু আমি তোকে মিথ্যা বলেছিলাম । কিন্তু আজ তোকে সব
জানানো দরকার । তাই এই চিঠি লিখছি । আমায় তুই ভুল বুঝিস
না ।
আজ আমার বলতে খুব
কষ্ট হচ্ছে, তবু জেনে রাখ আমি তোর সত্যিকারের মা নই । আমি হাসপাতালের এক
সামান্য নার্স । তুই জন্মাবার পরই
তোর মা মারা যায় । তোর ফুটফুটে মুখের
দিকে চেয়ে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল । তোর বাবা তোকে দেখাশোনার ভার আমাকে নেবার প্রস্তাব
দিলে, তোর আর তোর বাবার অসহায় মুখের দিকে চেয়ে আমি রাজি হয়েছিলাম । হাসপাতালের চাকরি
ছেড়ে তোকে নিয়ে তোদের বাড়িতে এসে উঠেছিলাম । তখন আমার কতই বা বয়স, পঁচিশ-ছাব্বিশ
হবে হয়তো। একটা মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে আমি তোকে মা বলতে
শিখিয়েছিলাম । আমার নামের সাথে মিল
রেখে তোর নাম রেখেছিলাম রত্না । তোর বাবা আপত্তি করেননি । এক সময় তোর বাবা
আমাকে বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন । আমি রাজি হইনি । তোর বাবা আমাকে
কোনদিনও অসম্মান করেননি । তোর বাবার মত ভদ্রলোক জগতে বিরল ।
কুড়ি বছর কেটে গেল, তোকে
আমি বুকে করে আগলে রেখেছিলাম । আজ তোকে ছেড়ে যেতে আমার বড় কষ্ট হচ্ছে । কিন্তু আমি তোদের
বাড়িতে থাকলে ভবিষ্যতে তোর বিয়ে দিতে তোর বাবাকে খুব অসুবিধায় পড়তে হতে পারে । তাই আমি সবাইকে ছেড়ে
চলে যাচ্ছি । তুই কলেজ থেকে ফিরে
আমার এ চিঠি পড়ে হয়তো আমার উপর বিতৃষ্ণায় মুখ ফিরিয়ে নিবি । ঘৃণা করবি । আমি জানি মিথ্যে মা
সেজে আমি তোকে মিথ্যার স্বর্গে বসিয়েছি । কিন্তু বিশ্বাস কর,
আমি তোকে সত্যিকারের মায়ের মত ভালোবেসে আমার স্নেহের রত্নাকে বড় করে তুলেছি ।
আমায় ঘৃণা করিসনি, ভুলে যাস আমাকে । বাবাকে দেখিস । বাবাকে কোনদিন কষ্ট
দিস না । তুইও ভালো থাকিস । নতুন ঠাণ্ডা পড়ছে । ঠাণ্ডা লাগাসনি ।
ইতি--
তোর হতভাগিনী মা
পুনঃ- টেবিলে তোর খাবার ঢাকা দেওয়া আছে । খেয়ে নিস । আর রাতের খাবার সব ফ্রিজে রেখে এসেছি । রাতে খাবার আগে একটু গরম করে নিস ।
মেয়ের চিঠি
মাগো আমার মা,
আমি যে তোমায় ছাড়া কাউকে জানি না । তুমি কোথায় মা? তুমি আমায় কোনদিনও মিথ্যের স্বর্গে বসাওনি । আমাদের বাড়িটাকে তুমি স্বর্গ রচনা করেছ । সত্যিকারের স্বর্গ ছিল আমাদের বাড়ি । তুমি ছিলে আমাদের বাড়ির দেবী । আচ্ছা মা তুমিই তো শিখিয়েছিলে, যেখানে দেব-দেবী থাকে না সেটা নরক হয়ে যায় । তবে বলো, কেন তুমি চলে গেলে ? তোমাকে ছাড়া আমি যে আর কিছু ভাবতে পারি না মা ।
আচ্ছা বলোতো মা, জন্ম দিলেই কি কেবল মা হওয়া
যায় ? তোমার স্নেহ, মায়া-মমতার কি কোনও দাম নেই ? মাগো, তুমিই তো আমার সত্যিকারের মা
। তাতে লোকে যা বলে বলুক, যা ভাবে ভাবুক, তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না
। আমাদের আর কষ্ট দিও না । ফিরে এসো । মা তুমি কি করে ভাবলে আমি তোমায় ঘৃণা করবো । তাহলে তো তোমার সব শিক্ষা মিথ্যা হয়ে যাবে । আমি যে তোমায় বড্ড ভালোবাসি মা । তুমি ছাড়া আমার সব কিছু অন্ধকার । বলো মা, আমি কার কাছে আবদার করবো, কে আমাকে তোমার মত ভালোবাসবে । ফিরে এসো মা, তুমি ফিরে এসো । তুমি যদি আমায় ভালোবাস, তবে আমায় এত কষ্ট দিচ্ছ কেন ? ফিরে এসো মা ।
জানি না এ চিঠি আমি তোমার কাছে কি
করে পাঠাবো..
আমি তোমার মিষ্টি মেয়ে
রত্না
0 মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন