ভাগাভাগি
নন্দিনী সেনগুপ্ত
নন্দিনী সেনগুপ্ত
“উফ, এত রাত হয়ে গেলো, বুঝতেই পারিনি,... বহুকাল পরে নাইট শোতে সিনেমা
দেখলাম, কি বলো, একদম চল্লিশ বছর আগে যেরকম দেখতাম”... খুশিতে ডগমগ হয়ে
বলে উঠল সুমিত্রা।
“হ্যাঁ, তোমার রাতের ওষুধটার সময় কিন্তু
পেরিয়ে গেলো...” হাল্কা গলায় বলে উঠল সমর।
“যাক বাবা, পাড়াতেই এই নতুন মাল্টিপ্লেক্স
হয়ে বেশ হয়েছে, হেঁটে বাড়ি ফিরবো... আর চল্লিশ বছর আগের মত ট্যাক্সি খুঁজতে
হবে না”... সুমিত্রা বলে ওঠে।
“হ্যাঁ, ফিল্ম দেখে মনে হয় তোমার আর্থরাইটিসও
গায়েব! খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তো হাঁটছিলে সন্ধেবেলা... এখন তো দেখছি বেশ গটগট করে আমার আগে
আগে যাচ্ছ”... মজার ভঙ্গিতে বলে ওঠে সমর।
“হ্যাঁ, তার ওপর ট্যাক্সি ধরার টেনশন
নেই, ট্যাক্সিতে উঠে ভুলভাল ঠিকানা বলার টেনশন নেই!”
উত্তর দেয় সুমিত্রা।
সমরের হাঁটার গতি শ্লথ হয়... “মনে আছে তোমার এখনও?”
“বাঃ, মনে থাকবে না! ঐ দিনগুলো কি ভোলা
যায়? ভাবো তো... তখন তিনটে ঘরে আমরা জয়েন্ট ফ্যামিলির আটজন ঢাকুরিয়াতে
থাকতাম। আমি, তুমি, ঠাকুরপো, সোনাভাই আর কাজলা-- সবাই মিলে শোলে দেখতে গিয়েছিলাম। ইভনিং শো-র টিকিট পাওয়া গেল
না,
শেষমেশ নাইট শো। রাত করে বাড়ি ফেরার জন্য বাবার সেই মেশিনগান স্কোয়াডের ভয়ে তুমি
কীরকম নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলে, তারপর ফেরার সময় ট্যাক্সিতে উঠে
ঢাকুরিয়া বলার বদলে বলে বসলে সদরঘাট, বুড়িগঙ্গা! আর ট্যাক্সি
ড্রাইভার কিরকম ভ্যাবাচাকা খেয়ে বলেছিল, ও কিধর হ্যায়?”
চল্লিশ বছর আগের সেই বছর পঁচিশের যুবতী যেন খিলখিল করে
হেসে উঠল সুমিত্রার মধ্যে। সমর দাঁড়িয়ে পড়ে স্থাণু, রাতের কলকাতার সুনসান
রাস্তায়, “ঠিক। জানো.... এখনও তো মাঝে মাঝে ঐ মজার দিনগুলো, বা তারও আগের... আমার ছোটবেলা, ঢাকা শহরের অলিগলি এগুলো আমার স্বপ্নে ফিরে ফিরে আসে”।
সুমিত্রা পিছিয়ে আসে, সমরের একটা হাত স্পর্শ করে।
খুব খুব ভাল লাগলো নন্দিনীদীর এই লেখা, এ অনন্য সুক্ষ্ম অনুভূতি।
উত্তরমুছুন