কলকাতার
রাস্তাঘাট
তাপস ব্যানার্জী
পুরোনো কোলকাতার একটি বিখ্যাত রাস্তা হরি ঘোষ স্ট্রীট। এট কোলকাতার প্রাচীন্ রাস্তাগুলির অন্যতম। ১৮০৬ সালেও কোলকাতার যে মানচিত্র ছিল তাতেও এই রাস্তাটির অস্তিত্ত্ব রয়েছে। কিন্তু কে ছিলেন এই হরি ঘোষ?
তাপস ব্যানার্জী
পুরোনো কোলকাতার একটি বিখ্যাত রাস্তা হরি ঘোষ স্ট্রীট। এট কোলকাতার প্রাচীন্ রাস্তাগুলির অন্যতম। ১৮০৬ সালেও কোলকাতার যে মানচিত্র ছিল তাতেও এই রাস্তাটির অস্তিত্ত্ব রয়েছে। কিন্তু কে ছিলেন এই হরি ঘোষ?
প্রকৃতপক্ষে
তিনি ছিলেন ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর মুঙ্গের দূর্গের দেওয়ান।ইংরাজী ফারসি ও ইংরাজী
তিনি ছিলেন দক্ষ। কোলকাতার বুকে আরো দুটি রাস্তা বলরাম ঘোষ স্ট্রীট ও বারানসী ঘোষ
স্ট্রীট নামে যে দুটি রাস্তা আছে তাঁরা এই বংশের ই সন্তান।
মকরন্দ
ঘোষ এই বংশের আদি পুরুষ। মকরন্দ ঘোষের আদি বাড়ি গৌড়। পরবর্তীকালে নিশানাথ ঘোষ
হুগলী জেলার বালি গ্রামে বসতি স্থাপন করেন।পরবর্তীকালে এই বংশের আর এক পুরুষ মনোহর
ঘোষ ব্যারাকপুর গ্রামে চলে আসেন।
মনোহর
ঘোষ খুব দরিদ্র ছিলেন। শোনা যায় যে তিনি আকবরের সেনাপতি টোডরমলের
অধীনে গোমস্তার চাকুরী নেন।পরে মোহরার পদে উত্তীর্ন হন। নিজের পরিশ্রম এবং সততার
জন্য বহু অর্থের অধিকারী হন।কিন্তু মোগল পাঠান যুদ্ধের সময় সর্বসান্ত হন এবং কিছু
অর্থ নিয়ে চিত্রপুরী (বর্তমান চিৎপুর) গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। এখানে তিনি সর্বমজ্ঞলা ও চিত্রেশ্বরী
মন্দির নির্মান করেন (১৬১০ সালে)। প্রকৃতপক্ষে চিত্রেশ্বরী হলেন দেবী দূর্গা। ইতিহাস বলে সম্ভবত এই
চিত্রেশ্বরী হলেন একমাত্র ডাকাতে দূর্গা। ডাকাতে দূর্গা মন্দিরটি বর্তমানে ৯ খগেন
চ্যাটার্জ্জী স্ট্রীটে অবস্থিত। ১৬৩৭ সালে মনোহর ঘোষের মৃর্ত্যুর পর ডাকাতের উতপাত
ভীষন বেড়ে যায়।তাই তাঁর পুত্র রাম ঘোষ সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে সপরিবারে বর্ধমানে চলে
যান। তিনি উচ্চশিক্ষিত ছিলেন। ইংরাজী ফারসী ভাষা জানতেন। পরবর্তীকালে ওলন্দাজ
কোম্পানীতে চাকুরী গ্রহন করেন ও বহু অর্থের মালিক হন।
কিন্ত
তিনি নিজেই ডাকাতের হাতে নিহত হন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী ও একমাত্র পুত্র বলরাম ঘোষ
বেঁচে যান। বলরাম চন্দননগরে ডুপ্লের কাছে এসে আশ্রয় গ্রহন করেন।তিনি ছিলেন দুপ্লের
ব্যবসা সংক্রান্ত পরামর্শদাতা। এখানে বলরাম প্রভূত অর্থ উপার্জন করেন।তিনি ১৭৫৬
সালে ৯৫ বছর বয়সে গত হন।
বলরাম
ঘোষের চার পুত্র।রামহরি, শ্রীহরি,নরহরি, শিবহরি। শেষ দুই পুত্রের অকাল মৃত্যু
হয়। বলরামে মৃত্যুর পর রামহরি আর শ্রীহরি আবার কোলকাতায় ফিরে আসেন এবং
বাগবাজারেন্ত সাধাসিধা জীবনযাপন করতেন।
শেষ জীবনে এক বন্ধুর হয়ে জামিনদার হন এবং সেই বন্ধু বিশ্বাষঘাতকতা করেন।
তিনি সর্বসান্ত হলেন। তাই শেষ জীবন তিনি বারানসিতে অতিবাহিত করেন আর সেখানেই তাঁর
মৃত্যু হয়।
তথ্যঃ
কলিকাতার রাজপথ
অজিত কুমার বসু
0 মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন