নাট্য সমালোচনা
অরুণ চট্টোপাধ্যায়
অরুণ চট্টোপাধ্যায়
স্থানঃ শিশির মঞ্চ
কালঃ সন্ধ্যা ছটা (১০ই
জুন, ২০১৪)
নাটকঃ আসবি তুই কোন সকালে
প্রযোজনাঃ "বোড়ালসঞ্জীবনী "
রচনাঃ গৌতম বণিক
নির্দেশনাঃ আলমগীর হুসেন
পাত্র-পাত্রীঃ শোভন চক্রবর্তী, কৌশিক
মণ্ডল, রাজশ্রী মণ্ডল, পিয়ালী দে, দেবাসিশ মিত্র, আলমগীর হুসেন, প্রদীপ কুমার ঘোষ, কৌস্তুভ দত্ত, প্রসেঞ্জিত সরকার, আলমগীর মল্লিক ও মৃত্যঞ্জয় ভট্টাচার্য।
আন্দোলন হল কিছু মানুষের প্রতিবাদ – একক বা সম্মিলিত।
প্রচলিত সমাজব্যবস্থা যেখানে ডেকে আনছে সমাজের দ্রুত অবক্ষয়, সেখানে এই নাটক অবশ্যই এক প্রতিবাদ আর বলা বাহুল্য
অবশ্যই এক আন্দোলন ।
শিক্ষার সঙ্গে রাজনীতি অঙ্গীভূত হয়েছে বিগত বেশ কয়েক দশক ধরেই । রাজনীতির সঙ্গে একীকরণ হয়েছে আবার মাফিয়া চক্র । এই নাটকের মূল উপজীব্য যেটা । শিক্ষাক্ষেত্র হয়েছে ড্রাগ ব্যবসার একটি কেন্দ্রবিন্দু । নিরীহ ছাত্রদের করে তোলা হচ্ছে মাদকাশক্ত। কালো টাকার পাহাড় জমছে এক মাফিয়া চক্রের পকেটে আর সেই সঙ্গে তরতাজা যুবক- যুবতীদের জীবনে নামছে অন্ধকারের কালো পর্দা । জীবন ছারখার হয়ে যেতে বসেছে । প্রতিবাদ করার ফলশ্রুতিতে প্রাণ চলে যাচ্ছে অকালে । রাজনীতি, মাফিয়া আর প্রশাসনের দুষ্ট ত্রিকোণ চক্রে নিষ্ঠুর হত্যালীলা অনায়াসে বদলে যাচ্ছে সামান্য দুর্ঘটনায় । প্রশাসনের চোখ রাঙানিতে থানায় গিয়ে নিজের হাতে করা ডায়রি প্রত্যাহার করে নিয়ে আসতে হচ্ছে । তারপর পড়ে থাকছে শুধু দুচোখ ভরা চোখের জল আর অসহনীয় মানসিক যন্ত্রণা যা বিকৃতিতে হচ্ছে পর্যবসিত ।
এই নাটকের দৃশ্যের বাইরেও কত প্রাণ “অঙ্কুরে” বিনষ্ট হচ্ছে তা কিন্তু মোটেই কোনও কষ্ট- কল্পনা নয় – জ্বলন্ত বাস্তব । তদন্তে এসে পুলিশ অফিসারের ( দেবাশিস মিত্র ) চায়ের কাপে পিক
ফেলা একটি অতি সুন্দর প্রতীক । এটি অক্ষমের প্রতি সক্ষমের দম্ভ, ক্ষমতা-প্রকাশ
আর উদাসীনতার প্রতীক । এই প্রতীকটি নাটককে এক মূল্যবান মাত্রা দিয়েছে ।
আর এর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ির কাজের লোকের প্রতিবাদ আর একটি প্রতীক।
এটি বুঝিয়ে দেয় প্রতিবাদ করার লোক এখনও মরে যায়নি । কেউ না কেউ প্রতিবাদ করবেই । আর সব প্রতিবাদ বিফলে যায় না। একটি মাত্র দেশলাই কাঠি খড়ের গাদায় ফেললে তা নেভাতে একটি বিশাল গ্রামের সব পুকুর জলশূন্য হয়ে যেতে পারে । এক্ষেত্রে কাজের লোককে বেছে নেবার অর্থ দ্বিবিধ । এক, এই শ্রেণীর লোকেরা প্রায় সর্বহারা । তাই সবুজ বা নির্মল বাবুর প্রতিবাদ করে কিছু হারাবার ভয় থাকলেও এদের তা নেই । পিঠ যাদের দেওয়ালে এসে ঠেকেছে তাদের আর এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করতে ভয় কি ? দুই, আক্ষরিক বা প্রকৃত দুই অর্থেই এরা কিন্তু “কাজের লোক” অর্থাৎ যে কোনও প্রতিবাদের সূচনা কিন্তু এদের মধ্যে দিয়েই প্রথমে আসে । কখনও কি দেখেছেন কোনও শিল্পপতি রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন ? এরা করে কারণ এদের রাস্তায় নামতে হয় না বরং এরাই “রাস্তা” তৈরি করে ।
এটি বুঝিয়ে দেয় প্রতিবাদ করার লোক এখনও মরে যায়নি । কেউ না কেউ প্রতিবাদ করবেই । আর সব প্রতিবাদ বিফলে যায় না। একটি মাত্র দেশলাই কাঠি খড়ের গাদায় ফেললে তা নেভাতে একটি বিশাল গ্রামের সব পুকুর জলশূন্য হয়ে যেতে পারে । এক্ষেত্রে কাজের লোককে বেছে নেবার অর্থ দ্বিবিধ । এক, এই শ্রেণীর লোকেরা প্রায় সর্বহারা । তাই সবুজ বা নির্মল বাবুর প্রতিবাদ করে কিছু হারাবার ভয় থাকলেও এদের তা নেই । পিঠ যাদের দেওয়ালে এসে ঠেকেছে তাদের আর এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করতে ভয় কি ? দুই, আক্ষরিক বা প্রকৃত দুই অর্থেই এরা কিন্তু “কাজের লোক” অর্থাৎ যে কোনও প্রতিবাদের সূচনা কিন্তু এদের মধ্যে দিয়েই প্রথমে আসে । কখনও কি দেখেছেন কোনও শিল্পপতি রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন ? এরা করে কারণ এদের রাস্তায় নামতে হয় না বরং এরাই “রাস্তা” তৈরি করে ।
স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক দুই অবস্থাতেই নায়িকার স্বাভাবিক অভিনয় নজর কাড়ে । অবশ্য অভিনয়ের দিক থেকে কারোরই ঘাটতি নেই । আবহ খুব সুন্দর । মোটর সাইকেলের আওয়াজ এত প্রাণবন্ত যেন মনে হয় পাশ দিয়েই বেরিয়ে যাচ্ছে । এই আওয়াজ পাবার সঙ্গে সঙ্গে জানলার কাছে ছুটে এসে নায়িকার জানলা দিয়ে
ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা অবশ্যই প্রশংসনীয় ।
এই সময় তার মুখচোখের উদ্বেগ ও অন্যান্য প্রতিক্রিয়া অবশ্যই দর্শকদের নজর কাড়ে ।
তবে একথাও বলতে হবে কোন মানসিক অবস্থায় নায়িকা তার গর্ভস্থ শিশুকে উৎপাটিত করতে চেয়েছিল সেটি আর একটু সুন্দর ভাবে দর্শকদের কাছে উপস্থাপিত করলে ভাল হত । শত শত “অঙ্কুরের” এমন বিনষ্টের চেয়ে সবকিছু “অঙ্কুরে বিনষ্ট” হওয়াই যে অধিকতর ভাল, নায়িকার এই চিন্তা যে তার কত দুঃখের ফসল আর সমাজব্যবস্থার দিকে তা কেমন ভাবে আঙুল তুলছে সেটি আরও মনোগ্রাহী হওয়া উচিৎ ছিল । সবুজের প্রতিক্রিয়া বেশ স্বাভাবিক । একটি শিশুর জন্ম তার মা দেয়, সুদীর্ঘকাল আপন গর্ভে তাকে প্রতিপালন করে এটাও ঠিক । কিন্তু পিতার হৃদয় সৃষ্টি করে এক মানস কল্পনার । তিল তিল করে আপন হৃদয়ে বড় করে তোলে তার সেই মানস প্রতিমূর্তিকে। পিতৃহৃদয়ের আকুতি যে কত বড় আকুতি তা রবীন্দ্রনাথ আমাদের দেখিয়েছেন কাবুলিওয়ালা গল্পে । এক্ষেত্রে সবুজ নিজে আবার অঙ্কন-শিল্পী অর্থাৎ একজন স্রষ্টা । একজন নিজের জঠরে এক দলা মাংসপিণ্ডে প্রাণ সঞ্চার করে চলেছে দিনের পর দিন আর একজন তার কল্পনায় – মস্তিস্ক আর হৃদয়ে । দুই স্রষ্টার টানাপোড়েন এই নাটকের অন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দিক ।
নাটকটিকে আর একটু গতিশীল করলে তার মধ্যে আর একটু রোমাঞ্চ সৃষ্টি করলে মনে হয় খারাপ কিছু হত না । এই নাটকটির শেষে মনে হল যেন কেউ একে জোর করে শেষ করে দিল। প্রশাসন যখন আবার মুখ ফেরাল, পুনরায় তদন্ত শুরু হবার মুহূর্তটি আরও সুন্দর করা যেত – করা যেত আরও প্রতীকী ।
0 মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন