আদুরে
রানী সিনহা
রানী সিনহা
যেই না বলা বাপের বাড়ি যাবো,অমনি সে কি রাগ।
'বছর বছর বাপের বাড়ি যাওয়ার কী আছে। এ বছর যাওয়া বন্ধ।
তা কখনও হয় না কি..!!!! অনেক বলার পর ভোলানাথ রাজি।
তুমি আছো স্বামীর ঘরে আদরে আহ্লাদে, স্বামীসোহাগিনী।
চারদিনের বেশি তো তুমি থাকতেই পারো না।
তোমার বর তো তোমাকে ছাড়বে না কিছুতেই, চারদিনের বেশি
থাকতেই দেবে না। তোমাকে তো খুব
ভালবাসে, তোমাকে ছেড়ে সে থাকতে পারে না।
কিন্তু তোমারও তো মন কেমন করে সকলের জন্য।
এদিকে তোমার জন্য সকলে অপেক্ষায় বসে।
তুমি আসবে... তোমার বাপের বাড়ি। আলালের ঘরে দুলালী,
বছরে তো একবার আসো।
তুমি আসবে বলে আকাশে বাতাসে শিউলি ফুলের গন্ধ
রাস্তার ধারে ধারে কাশফুলের সারি,
বাপের বাড়িতে হৈ চৈ তোমার আসায়। সারা শহর আলোয়
আলোকিত,
বাড়ী ঘর আলপনায় সেজে উঠেছে। ঢাকিরা দূরদূরান্ত
থেকে এসেছে
ঢাকের বাজনা দিয়ে
তোমাকে বরন করে নিতে।
চারিদিকে সাজো সাজো রব, বাড়ির মেয়ে আসছে
সঙ্গে চার ছেলেমেয়ে নিয়ে।
সকলে নতু্ন জামা, শাড়ি, রঙিন ফিতে কিনেছে,
তোমার জন্যও নানা রকমের গয়না, শাড়ি... আরও কত
কিছু সাজ সরঞ্জাম।
ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা শুধু অপেক্ষায়, কবে তুমি আসবে
আর তারা দল বেঁধে তোমাকে দেখবে নানা সাজে।
আর তোমার বৃদ্ধা মা, সিঁথিতে সিঁদুর
দিয়ে
বাবার হাত ধরে
তোমার জন্য অপেক্ষায়।
তোমার আপন ভোলা বর তোমাকে রওনা করে দিল সঙ্গে চার
ছেলেমেয়েকে সঙ্গে দিয়ে কেবল মাত্র চারদিনের জন্য।
এই চার দিন সকলে নাওয়া খাওয়া ভুলে আনন্দে মেতে উঠেছে। পাড়ায় পাড়ায় নাটক, উঠতি গায়ক
গায়িকাদের গলা ছেড়ে গান আর তার সঙ্গে উদ্দাম নাচ।
সারা দিন মাইকে হিন্দি বাংলা সিনেমার গান।
তুমি আসবে এই ভেবে ভেবেই এক বছর ধরে চলে নানা রকম জল্পনা
কল্পনা।
দেখতে দেখতে কোথা দিয়ে চার দিন কেটে যায় বোঝাই যায় না। তুমি তো ইচ্ছে
করলেও আর থাকতে পারবে না। তোমাকে কেউ ছাড়তে চায় না কিন্তু তোমার তো কোনও উপায় নেই... অগত্যা তুমি চললে
স্বামীর বাড়ি। সবাই তোমাকে
অশ্রুজলে বিদায় দিল আর বারবার বললো সামনের বছর আবার এসো গো আমাদের কাছে। তোমার জন্য আমরা
অপেক্ষায় রইলাম।
0 মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন