মা আমার ব্রহ্মময়ী
সৌমিত্র ব্যানার্জী
মা আমার একাধারে ব্রহ্মময়ী, ভুবনমোহিনী, বিশ্বপালিনী, বিশ্বপ্রসবিনী। মা আবার বিশ্বসংহারিণী, শ্মশানবাসিনী। কৃপাময়ী আর ধংসকারিণী। স্নেহময়ী ও আবার করালী, আনন্দময়ী কিন্তু অগ্নিজিহ্বা, লোলজিহ্বা, নরকর মেখলাধারিণী। সৃষ্টি ও ধ্বংস। একই মহাশক্তির ভিন্নরূপ কালীমূর্তিতে প্রকটিত। মা একাধারে ধূমহীন স্বর্ণবর্ণা অগ্নিশিখা। আবার সুরজ কিরণের অভাবাত্মিকা ধ্বংসর হেতু। অগ্নির ধূমপুঞ্জ মহামেঘ ও সুরজ কিরণের অভাবে মিশকালো। চিতাগ্নিরূপী শ্মশানচারী সমস্ত অশুভ শক্তিনাশ করে মুণ্ডমালিনী। ছিন্নমস্তা, দুই কষে রক্তধারা বিশ্বনাশিনী ধ্বংস শক্তির ভয়াবহ প্রকাশ। আবার শান্ত, সুন্দর, করুণাময়ী। একই শক্তির এই বৈপরীত্য নিয়ে কালীতত্ত্ব, কালীমহিমা।
মা কালী হিন্দু দেবী। কিন্তু তিনি বিশ্বমাতা। তাই নানা যুগে নানান জাতি, ধর্ম ও সভ্যতায় কালী-সদৃশ দেবীর দেখা পাই। তত্ত্বগত ভাবেও তাদের মধ্যে মিল খুঁজে পাই।
এমনই এক দেবী কোহাটলিকুয়েহ (COATALICUE) সম্পর্কে আমরা জানব।
১৪ থেকে ১৬ শতাব্দীতে মেসো–আমেরিকান সভ্যতা, প্রাচীন মেক্সিকোর নাহুয়াতল-ভাষী (Nahuatl) অ্যাজটেক (Aztec) সমাজের দেবী মা কোহাটলিকুয়েহ। ইনি একদিকে গর্ভধারণের দেবী। রজলার দেবী, শস্য-শ্যামলা ও চাষবাস সৃষ্টির প্রতীক। সৃষ্টিকারী উত্তাপশক্তি তারই মধ্যে। অপরদিকে তিনিই শিকার, ধ্বংস, যুদ্ধ, নরহত্যার দেবী। তিনি ভূমিতত্ত্বের দেবী অর্থাৎ ধরিত্রীমাতা হলেও সুর্য, চন্দ্র, তারা এবং দক্ষিণাকাশ (দক্ষিণাকালী?) তারই নিয়ন্ত্রণে। জন্ম-জন্মান্তর-মৃত্যুর নির্ধারণ তিনিই করেন। তিনি রেড-ইন্ডিয়ানদের রক্ষাকর্ত্রী এবং তাদের তিনি গর্ভ হতে কবরস্থান উভয়েরই অধিষ্ঠাত্রী।
কোহাটলিকুয়েহ সর্পেরও অধিষ্ঠাত্রী কারণ সাপ হল প্রতীকী রজলা। অজস্র সাপের সমাহার তার কটিবন্ধে। সর্পগুলি যেন রক্তের ধারা। কোহাটলিকুয়েহ দেবী তিনি মুণ্ডমালিনী। তার বুক বেয়ে নেমে এসেছে মানুষের (তারই সন্তানদের) হৃদযন্ত্রের মালা। বুকের উপর লকেটে অসংখ্য নরহস্ত দিয়ে ধরা মানুষের মাথার খুলি ও নরকপাল। আবার তার স্তন স্নেহময়ী মায়ের মতন ভারী, দুগ্ধপূর্ণ, উদ্ধত, পুষ্টিদায়ী।
কথিত আছে যে বর্তমান সৃষ্টির পূর্বে দেবীকে বলি দেওয়া হয়। তার নিজের মুন্ডছেদ হয়ে দু’টি ধারা নেমে আসে (ছিন্নমস্তা?)। মায়ের মাথার জায়গায় দুটি পরস্পর যুক্ত সাপের লোলজিহ্বা মুখ। তার হাতে বড় বড় নখ, তিনি রক্তলোলুপা এবং মনুষ্য মৃতদেহ সেই নখ দিয়ে চিরে ভক্ষণ করেন। নশ্বর দেহ তাই ভূমি বা প্রকৃতিতেই বিলীন হয়ে যায়। দেবীর মাথার পিছনে ১৩টি বেণী। অ্যাজটেক মতে ১৩টি স্বর্গ এবং বছরে ১৩টি মাস। দেবী একাধারে কুমারী ও অপরদিকে বিশ্বজননী। আমাদের মা কালী ও অ্যাজটেকদের কোহাটলিকুয়েহ-র মধ্যে কি আশ্চর্য সাদৃশ্য!
সৌমিত্র ব্যানার্জী
মা আমার একাধারে ব্রহ্মময়ী, ভুবনমোহিনী, বিশ্বপালিনী, বিশ্বপ্রসবিনী। মা আবার বিশ্বসংহারিণী, শ্মশানবাসিনী। কৃপাময়ী আর ধংসকারিণী। স্নেহময়ী ও আবার করালী, আনন্দময়ী কিন্তু অগ্নিজিহ্বা, লোলজিহ্বা, নরকর মেখলাধারিণী। সৃষ্টি ও ধ্বংস। একই মহাশক্তির ভিন্নরূপ কালীমূর্তিতে প্রকটিত। মা একাধারে ধূমহীন স্বর্ণবর্ণা অগ্নিশিখা। আবার সুরজ কিরণের অভাবাত্মিকা ধ্বংসর হেতু। অগ্নির ধূমপুঞ্জ মহামেঘ ও সুরজ কিরণের অভাবে মিশকালো। চিতাগ্নিরূপী শ্মশানচারী সমস্ত অশুভ শক্তিনাশ করে মুণ্ডমালিনী। ছিন্নমস্তা, দুই কষে রক্তধারা বিশ্বনাশিনী ধ্বংস শক্তির ভয়াবহ প্রকাশ। আবার শান্ত, সুন্দর, করুণাময়ী। একই শক্তির এই বৈপরীত্য নিয়ে কালীতত্ত্ব, কালীমহিমা।
মা কালী হিন্দু দেবী। কিন্তু তিনি বিশ্বমাতা। তাই নানা যুগে নানান জাতি, ধর্ম ও সভ্যতায় কালী-সদৃশ দেবীর দেখা পাই। তত্ত্বগত ভাবেও তাদের মধ্যে মিল খুঁজে পাই।
এমনই এক দেবী কোহাটলিকুয়েহ (COATALICUE) সম্পর্কে আমরা জানব।
১৪ থেকে ১৬ শতাব্দীতে মেসো–আমেরিকান সভ্যতা, প্রাচীন মেক্সিকোর নাহুয়াতল-ভাষী (Nahuatl) অ্যাজটেক (Aztec) সমাজের দেবী মা কোহাটলিকুয়েহ। ইনি একদিকে গর্ভধারণের দেবী। রজলার দেবী, শস্য-শ্যামলা ও চাষবাস সৃষ্টির প্রতীক। সৃষ্টিকারী উত্তাপশক্তি তারই মধ্যে। অপরদিকে তিনিই শিকার, ধ্বংস, যুদ্ধ, নরহত্যার দেবী। তিনি ভূমিতত্ত্বের দেবী অর্থাৎ ধরিত্রীমাতা হলেও সুর্য, চন্দ্র, তারা এবং দক্ষিণাকাশ (দক্ষিণাকালী?) তারই নিয়ন্ত্রণে। জন্ম-জন্মান্তর-মৃত্যুর নির্ধারণ তিনিই করেন। তিনি রেড-ইন্ডিয়ানদের রক্ষাকর্ত্রী এবং তাদের তিনি গর্ভ হতে কবরস্থান উভয়েরই অধিষ্ঠাত্রী।
কোহাটলিকুয়েহ সর্পেরও অধিষ্ঠাত্রী কারণ সাপ হল প্রতীকী রজলা। অজস্র সাপের সমাহার তার কটিবন্ধে। সর্পগুলি যেন রক্তের ধারা। কোহাটলিকুয়েহ দেবী তিনি মুণ্ডমালিনী। তার বুক বেয়ে নেমে এসেছে মানুষের (তারই সন্তানদের) হৃদযন্ত্রের মালা। বুকের উপর লকেটে অসংখ্য নরহস্ত দিয়ে ধরা মানুষের মাথার খুলি ও নরকপাল। আবার তার স্তন স্নেহময়ী মায়ের মতন ভারী, দুগ্ধপূর্ণ, উদ্ধত, পুষ্টিদায়ী।
কথিত আছে যে বর্তমান সৃষ্টির পূর্বে দেবীকে বলি দেওয়া হয়। তার নিজের মুন্ডছেদ হয়ে দু’টি ধারা নেমে আসে (ছিন্নমস্তা?)। মায়ের মাথার জায়গায় দুটি পরস্পর যুক্ত সাপের লোলজিহ্বা মুখ। তার হাতে বড় বড় নখ, তিনি রক্তলোলুপা এবং মনুষ্য মৃতদেহ সেই নখ দিয়ে চিরে ভক্ষণ করেন। নশ্বর দেহ তাই ভূমি বা প্রকৃতিতেই বিলীন হয়ে যায়। দেবীর মাথার পিছনে ১৩টি বেণী। অ্যাজটেক মতে ১৩টি স্বর্গ এবং বছরে ১৩টি মাস। দেবী একাধারে কুমারী ও অপরদিকে বিশ্বজননী। আমাদের মা কালী ও অ্যাজটেকদের কোহাটলিকুয়েহ-র মধ্যে কি আশ্চর্য সাদৃশ্য!
মা কালী সংক্রান্ত গল্প বা তথ্য ও তত্ত্বগুলি আমরা সবাই কমবেশি জানি। এবার জেনে নেব মাতা কোহাটলিকুয়েহ-র স্তুতি।
মাতৃগর্ভে থাকা হুইটজিলোহপোহোছটলিহ সব টের পেলেন। তিনি দেবীর কণ্ঠনালী ছিন্ন করে গর্ভ থেকে বের হয়ে জন্মগ্রহণ করলেন, নিজের মাতাকে রক্ষা করার জন্য।
তিনি জিউইহকোউয়াহটলহ নামক অস্ত্রে শোভিত (Xiuhcoatl)। এই অস্ত্রটি অগ্নিসর্পের ন্যায়। মতান্তরে এটি আদপে সূর্যকিরণ। হুইটজিলোহপোহোছটলিহ তার দিদি ও দাদাদের অর্থাৎ (চন্দ্র এবং তারাদের) সংহার করে টুকরো টুকরো করে পাহাড়ের চুড়ো থেকে নীচে ফেলে দিলেন। সেই থেকে প্রতি কালো রাতের পর শুভ দিন আসে।
এ যেন আলোকের জয় অন্ধকারের উপরে। শুভর জয় অশুভর উপরে। সূর্যের জয় চন্দ্র-তারাদের উপরে।
কোহাটলিকুয়েহ দেবী একাধারে মৃত্যু ও ধ্বংসের দেবী। অপরদিকে তিনি রজলা মাতা, মাতৃত্বের প্রতীক। প্রসবকালীন মৃত জননীর প্রতীক। তিনি আবার অবৈধ কুমারী মাতৃত্বেরও অধিষ্ঠাত্রী।
মা কালী সদৃশ এ দেবীর মূর্তি মেক্সিকোর জাদুঘরে রক্ষিত আছে।
0 মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন