একটি বিখ্যাত আমন্ত্রণ পত্র
তাপস ব্যানার্জি
১৭৭৮
সালের শেষের দিকে সমগ্র কলকাতা
চমকে উঠেছিল অদ্ভুত একটি আমন্ত্রণ পত্র
পেয়ে। বাংলাদেশের ব্রাম্ভণ এবং পন্ডিতরা
সেই পত্রখানি পেয়ে হতবাক।
পত্রখানি
এসেছিল ১২ নং সুকেশ স্ট্রীট থেকে (অধুনা সুকিয়া
স্ট্রীট) এবং পত্রলেখক ছিলেন বিদ্যাসগর মহাশয়। ডাকে
এবং হাতের মাধ্যমে সেই বিস্ময়কর পত্র সারা বাংলাদেশে ৮০০জন পন্ডিতের
কাছে পৌঁছেছিল। লেখা
হয়েছিল বাংলা গদ্যে। সে এক চিরস্মরণীয় ঘটনা। বাংলার
নবজাগরণের সূচনা হয়েছিল এই পত্রের মাধ্যমে।
সেই
পত্রে লেখা হয়েছিলঃ
শ্রী
শ্রী লক্ষামণিদেব্যাঃবিনয়ং নিবেদনম। ২৩শে
অগ্রহায়ণ রবিবার বিধবা কন্যার
শুভবিবাহ হইবেক, মহাশয়েরা অনুগ্রহপূর্ব্বক কলিকাতার অন্তঃপাতী সিমুলিয়ার সুকেশ স্ট্রীটের ১২
সংখ্যক ভবনে শুভাগমন করিয়া শুভকর্ম করিবেন। ইতি
তারিখ ২১শে অগ্রহায়ণ
শকাব্দঃ ১৭৭৮।
এই
পত্রখানি পেয়ে আনেক লোকের নিঃশ্বাস বন্ধ হবার জোগাড়। এইবার পাত্র-পাত্রী সমাচারঃ
পাত্রঃ
যশোরের খাটুয়া গ্রাম নিবাসী সুবিখ্যাত রামধন তর্কবাগীশের পুত্র শ্রীশচন্দ্র
বিদ্যারত্ন। পেশাঃ মুর্শিদাবাদের জজ পণ্ডিত।
পাত্রীঃ
কালীমতি দেবী। পিতার নাম ব্রম্ভানন্দ মুখোপাধ্যায়। নিবাস
বর্ধমানের পলাশডাঙ্গা গ্রাম। কালীমতির
যখন ৬ বছর বয়স তখন সে
বিধবা হয়। প্রখ্যাত পণ্ডিত মদনমোহন তর্কালংকার মহাশয়ের
উদ্যোগে শ্রীশ বিবাহ করতে রাজি
হয়।
একটু
বিয়ের খবর দেওয়া যাক......
বিয়ে
ছিল গোধূলি লগ্নে। পাত্র
এসে উঠেছিল বিখ্যাত রামগোপাল ঘোষ মহাশয়ের বাড়িতে। শ্রীশ
একটি পালকিতে চললেন। সঙ্গে
চললেন তখনকার
দিনের বিখ্যাত সব মানুষেরা বরযাত্রী হিসাবে যেমন রামগোপাল ঘোষ, দ্বারকানাথ
মিত্র, শম্ভুনাথ পন্ডিত, হরচন্দ্র
ঘোষ প্রমুখ। স্বয়ং
বিদ্যাসাগর মশাই সর্বাগ্রে পালকি ধরে হাঁটতে লাগলেন। রাস্তা লোকে লোকারন্য। সবাই
এসেছে মজা লুটতে। বিধবার বিয়ে দেখতে। কোথাও
পা ফেলার জায়গা নেই। পালকি
নিয়ে এগোবার জায়গা নেই। কোথাও
উৎসাহ কোথাও বা ব্যঙ্গ। কিন্তু
বরযাত্রীরা দৃঢ় পায়ে এগিয়ে
চললেন। গোলমালের ভয়ে পুলিশের ব্যবস্থা আগে
থেকেই করা ছিল। কিন্তু আর্শ্চয যে কোথাও কোনো গোলমাল
হলো না।
সব
দেখেশুনে সন্তুষ্ট হয়ে বিদ্যাসাগর মশাই মাঝপথ থেকে বিদায় নিলেন।
অতিকষ্টে
বর বিবাহ আসরে এলেন... সঙ্গে
এলেন সুপ্রসিদ্ধ সব পণ্ডিতেরা,
যেমন সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক জয়নারায়ণ
তর্কবাচস্পতি। এ ছাড়া
এসেছিলেন ভরতচন্দ্র শিরোমণি, প্রেমচন্দ্র শিরোমণি, তারানাথ
তর্কবাচস্পতি প্রমুখ অধ্যাপক এবং শাত্রজ্ঞ পণ্ডিতবর্গ।
বিদ্যাসাগর
মশাই নিজে পছন্দ করে কিনে দিয়েছিলেন পাত্রীর সাজসজ্জা।
অবশেষে
নির্বিঘ্নে সমাধা হল বিধবা বিবাহ। বাংলার
নবজাগরণের সূত্রপাত হল ১২৬৩ সালের ২৩শে অগ্রহায়ণ
রবিবার। ইংরাজি 7th December 1856।
প্রসজ্ঞত
জানাই এই বাড়িটির বর্তমান ঠিকানা 48A /48B Kailash Basu Street.
(সূত্রঃ কলকাতা, লেখক শ্রীপান্থ)