তর্পণ
ইন্দিরা দাশ
এই গণ্ডগোলের মধ্যে কিন্তু একদিন তিন্নির মা-ই পাকা করে দিলো নতুন আয়া বহাল করার সময়সীমা। ‘যাই বল বৌদিমণি, পিপলু বাবুর কাশিটাও কিন্তু অনেক দিন হয়ে গেলো, কমছেই না। তোমার ঐ আয়া মেয়েটারও তো যা সিড়িঙ্গে হাড়গিলে চেহারা, তাছাড়া বড় নোংরা। আমি বাপু কাজের নোক, যা বুঝি তাই বল্লেম, তোমরা যা ভালো বোঝ তাড়াতাড়ি করো। কার কোন রোগ কোত্থেকে এসে কোথায় বাসা বাঁধছে ভগা’য় জানে’। আর নয়, সেদিন সন্ধ্যেতেই পিপলুকে চেকআপ করানোর জন্য কিংশুককে টানতে টানতে নিয়ে চলল রোহিণী। গোঁফে তা দিয়ে, ডাক্তার খসখস করে টি-সি,
ডি-সি, ই-এস-আর, বুকের এক্স-রে আর একটা মান্টু টেস্ট লিখে দিলেন।
পরের দিন অফিস ছুটি নিয়ে সব টেস্ট করিয়ে ফেলল রোহিণী। পরীক্ষা-নিরীক্ষাতে অল্প একটু রক্তশুন্যতা ছাড়া আর কোনও গোলমাল বেরোল না। কিন্তু আয়া বদলের ব্যাপারে আর কোনও দ্বিধা রইল না, সে আর এক অবাঙালিই জুটুক আর যাই জুটুক।
সেই রোববার শাশুড়ি-মা’র বাতের মলমটা একটু মালিশ করতে করতে ব্যাপারটা খুলে বলল রোহিণী। মোহিনীবালা শুনে তো প্রথমেই হাঁ-হাঁ করে উঠলেন। ‘বল কি বৌমা, কালো কুষ্ঠি একটা মেয়ে এসে অন্ডলে-মন্ডলে বকবে সারাক্ষণ, আর চায়ে তেঁতুল-গোলা জল মিশিয়ে এনে খাওয়াবে! হে ভগবান, এ কি শাস্তি রে বাবা!’
ভদ্রমহিলার অবস্থা দেখে খারাপ লাগল রোহিণীর। সত্যিই তো, এই বয়েসে কি আর অতটা অ্যাডজাস্ট করার ক্ষমতা থাকে, না কি থাকে ধৈর্য। কিন্তু উপায়টাই বা কি। কিন্তু ওনার কথা মেনে নিয়ে ওনাকে একা সারাটা দিন থাকতে দেওয়াটাই কি উচিত? তিন্নির মাকেও বার দুয়েক বলে দেখেছে রোহিণী, যদি সকাল আর দুপুরটা সে এ বাড়িতে একটু কাটাতে রাজি হয়। কিন্তু এই ঠিকে লোকগুলোর এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরে ঘুরে বেড়িয়ে কাজ করার সাংঘাতিক নেশা। বরের রেজর দিয়ে এক বাড়ির বৌয়ের বগল পরিষ্কারের কথা অন্য বাড়িতে, আবার ও বাড়ির শাশুড়ি-বউয়ের ঝগড়ার আসল কারণটা এ বাড়িতে ফাঁস করা, এ সবই তাদের জীবনের আলুনি ভাত-পাতে তেঁতুলের আচার। তাছাড়া পড়ে থাকা অব্যবহৃত বা অল্প ব্যাবহার করা স্নো-পাউডার-সাবান, ছোট থেকে বড় হয়ে যাওয়া বাবুদের ছেলেমেয়েদের জামাকাপড়, বউদিদের ভালো না লাগা শাড়ি ব্লাউজও তো কম জোটে না। তাই খাঁচার পাখিটি হয়ে তিন্নির মা বাঁধা পড়তে চাইল না।
সোমবার বিকেলে পুরনো মেয়েটিকে বিদায় জানিয়ে দিল রোহিণী। মঙ্গলবার শুভাগমন হোল বাসন্তির। বাসন্তাকুমারী তার আসল নাম। আসল নামের সঙ্গে আনুষঙ্গিক যে নামগুলো, সেগুলো তার গ্রামের নাম, বাবার নাম,
তারও বাবার পরিচয় বহন করে নামের লেজুড় রীতিমত লম্বা করে ফেলেছে। ছাঁটকাট করে ঠিক করা হোল, তাকে বাসন্তিই ডাকা হবে। দক্ষিণী মেয়ের পালিশ করা কালো রঙে একটা ঔজ্জ্বল্য আছে। কিন্তু তার লম্বা চুলের থেকে যে নারকেল তেলের গন্ধ বেরোচ্ছিল তা একদম পছন্দ হল না মোহিনীবালার। মেয়েটা রোগা পাতলা। চোখ দুটো দীঘল, কিন্তু দোয়েল পাখির মত ছটফটে। কিন্তু কীসের যেন একটা আশঙ্কা সেই চোখে সর্বদা ভাসে। হয়ত কাজ হারাবার একটা ভয় রয়েছে মনে মনে, তাই এমনটা,
ভাবল রোহিণী। কাজকর্মে অবশ্য পরিষ্কার পরিছন্ন। চটপটে মেয়ে। তার ভাঙা ভাঙা হিন্দির মধ্যে নিজস্ব মাতৃভাষার টান মিলিয়ে একটা উত্তর-দক্ষিণ মেশানো খিচুড়ি ভাষা তৈরি করে নিয়েছে সে কথোপকথনের জন্য। মোহিনীবালা এদিকে কানে কম শোনেন। অথচ ব্যাপারটা অস্বীকার করেন প্রাণপণে, হিয়ারিং এইডটা ব্যবহার করতে চান না। ইতিমধ্যে এই মেয়ের আগমন ও এই অদ্ভুত ভাষার কথাবার্তা তাঁর আরও অসহ্য লাগল।
কিন্তু রোহিণীর কেন যেন ভালো লেগে গেল মেয়েটাকে। সরু সোনালি পাড় লাগানো পরিষ্কার সাদা শাড়ি আর মাথার বিনুনিতে ছোট্ট বেলফুলের মালায় বেশ একটা পবিত্র পবিত্র ভাব। কপালের ছোট সিঁদুর টিপটার ওপরে একটা চন্দনের টিপও পরে আসে। বোঝা যায় বাড়ি থেকে পুজো সেরেই রওনা দেয় সে। কিন্তু ওই একই ধরনের দুটো শাড়ি সে কেচে ধুয়ে বারবার পরে পরে আসে রোজ। একদিন সাত পাঁচ ভেবে জিজ্ঞেসই করে ফেলল রোহিণী, ‘অউর শাড়ি নেই হ্যাঁয় কেয়া তুমহারে পাস, বাসন্তি?’
চোখ নীচু করে একটু লজ্জিত হেসে মেয়েটা আস্তে জবাব দিল, শাড়ি দু-তিনখানা আরও রয়েছে, কিন্তু সেগুলো বাইরে কোথাও পরে যাওয়ার অবস্থায় আর নেই, একটু বেশি পুরনো হয়ে গিয়েছে। মাস খানেক কাজ করলে না হয় একে একখানা শাড়ি-ব্লাউজ দেওয়া যাবে, মনে মনে ঠিক করে রাখল রোহিণী।
দিন কয়েক কেটে গেলো। বাসন্তির ওপর বিরক্তিটা যেন একটু কমেছে শাশুড়ি মায়ের। মোহিনীবালাকে বেশ যত্নে রাখে সে। অবসর সময়ে বাড়ির ছোটখাটো কাজও কিছু কিছু করে ফেলে। এই সেদিনই তো, অফিস থেকে ফিরে রোহিণী দেখল, হাত মোছার কাপড় নিয়ে বাইরের ঘরের জানলার কাচ, টেবিল,
সোফা পরিষ্কার করতে বসেছে সে। একবার মানা করতে গিয়েও মনে মনে খুশি চেপে রেখে নিজের ঘরে ঢুকে পড়ল রোহিণী। রাতে কিংশুককে এ কথা বলতে সেও বেশ খুশি হয়ে বলল, “তাহলে আর কি, এবার একদিন ভরতনাট্যম নাচ-টাচ দেখিয়ে দিতে বল না হয় আমাদের, ঐ যে কিসব তাম-ধি-তাম, তেই-তা-থেই করে-টরে নাচে”। কটাক্ষটা রোহিণীর ওপরেই কিনা আন্দাজ করার চেষ্টা করল একবার রোহিণী। বিয়ের আগে আগে সে
ভরতনাট্যম শিখেছিল মন দিয়ে। কলেজের ফাংশনে তো সে স্টেজেও নেচেছে। কিন্তু বিয়ের পর আর শ্বশুরমশাই ব্যাপারটা বেশি দূর এগোতে দেননি। বাড়ির বউ গান বাজনা করতে পারে, কিন্তু নাচ করাটা বিসদৃশ লেগেছিল কিংশুকের বাবার। সুযোগ আর উৎসাহের অভাবে অভ্যাসটা তাই নষ্ট হয়ে গেছে রোহিণীর। প্রথম প্রথম বেশ মনঃকষ্ট হোত। টিভিতে ভালো কোনও ভারতীয় ক্লাসিক্যাল নাচের শো দেখালে হাত-পা গুলো অবাধ্য হত একটু, নড়াচড়া করতে চাইত তালে তালে, সৌন্দর্য সুষমার ভঙ্গীতে। এ জিনিসটা একদিন আড়চোখে দেখে ফেলল কিংশুক। রাতে
বিছানায় তাকে বলল, “দেখো, যে সংসারে এসেছ, সেখানে তোমায় সম্মান, আধিপত্য, ভালোবাসা পেতে হলে কিছু তো ছাড়তে হবে। মানিয়ে নিতেই হবে কিছুটা রোহিণী। যে জিনিস পেছনে ফেলে এসেছ তাকে আর ধরে রাখার চেষ্টা করে লাভ আছে কি! বাবার চোখে পড়লে ব্যাপারটা কিন্তু দেখতে খুব খারাপ দেখাবে। উনি আগেই বারণ করে রেখেছেন এসব সম্বন্ধে, মনে আছে নিশ্চয়”। জবাব না দিয়ে মৌন সম্মতিতে পাশ ফিরে শুয়েছিল রোহিণী। সে রাতে যদিও চোখের পাতার নীচ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়েছিল, তৈরিও হয়েছিল একটা স্থির সংকল্প। সেই থেকে নাচ-টাচ টিভি সিরিয়ালে হোক,
আর কোনও নাচের প্রোগ্রামেই হোক, রোহিণী আর দেখে না। টিভিতে কোনও চ্যানেলে দেখাতে শুরু করলে সবার সঙ্গে বসে থাকলেও কাজের অছিলায় উঠে চলে যায় সে।
বাসন্তির ভরতনাট্যম দেখানোর ব্যাপারটায় একটা প্রছন্ন অসম্মানও কানে বাজল তার বোধহয়। মেয়েটার সংসারের আর্থিক অবস্থা খারাপ তাই এমন কাজ করতে এসে জুটেছে ভিন্ন শহরে। একদিন বসে শুনেছে রোহিণী তার কথা। কেরালায় বাড়ি ওদের। সমুদ্র থেকে বেশি দূর নয় সেই ছোট্ট শহর। সেখানকার স্টেট ইলেকট্রিসিটি বোর্ডে ভালোই চাকরি করত স্বামী তার। একটা অ্যাক্সিডেন্টে অনেক উঁচু থেকে মাটিতে পড়ে যায় একদিন। মাথায় গভীর চোট পাওয়ার পর যখন তার জ্ঞান ফেরে তখন দু-পায়ে আর বল নেই, দু-হাতের শক্তিও নিঃশেষ প্রায়। বিছানায় শুয়ে শুয়ে কোনও মতে এখন শুধু ছেলেমেয়ে তিনটের পড়াশোনা একটু দেখিয়ে দিতে পারে সে। রোজগারপাতির সংস্থান একমাত্র বাসন্তিই। বাসন্তির দাদা কিছু আর্থিক সাহায্য শুরু শুরুতে করলেও বাবা-মা মারা যাওয়ার পর বউদি আর অনর্থক অর্থ অপচয় করতে দেয়নি সংসার খরচ থেকে। বাসন্তির বড় মেয়েটা নাইনে উঠেছে, ছোট ছেলে আর মেয়েটা এখনও টু আর থ্রি-তে। ক্লাস টেন অবধি পড়াশোনা করা বাসন্তী বহু চেষ্টা করেছে স্বামীর চাকরির জায়গায় কোনও একটা চাকরি পেতে। কিন্তু সরকারী চাকরি পাওয়ার জন্যও এখন উৎকোচের অর্থের অঙ্কটা এতো বেশি, যে স্বামীর চিকিৎসা, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, সংসার চালানোর খরচা থেকে সেটা আর জোগাড় করতে পারল না সে।
সোনাদানা বন্ধক রেখে, বড় মেয়েটার ভরসায় সংসার ফেলে সে এসে উঠেছে কলকাতায় এক দূর সম্পর্কের
দিদির বাড়িতে। ন্যাশনাল মেডিক্যালে দিদি নার্সের কাজ করে। বাড়িতে দুটো বাচ্চা ছেলে এখনও বেশি বড় হয়নি। ছোট ছেলেটা তো সবে বছর তিনেকের। তাই রাতের ডিউটি নেয় না সে। পরিবর্তে বিশেষ ছুটিছাটা না নিয়ে ডিউটি করে, রবিবারও ছুটি নেই। জামাইবাবু বাড়ির সামনের লাগোয়া বসার ঘরটিতে ‘কেরালা স্টোরস’ খুলেছে, বিক্রিবাটা মন্দ নয়। নারকেল চিপ্স, ভালো নারকেল তেল,
মুড়ুক্কু, সাম্বারের পাউডার, ইডলির সামগ্রী বিক্রি হয়। এছাড়াও মণিহারী জিনিসের মধ্যে টিপের পাতা, মশার ধূপ এমনকি কোহিনূর কন্ডোমও পাওয়া যায় সে দোকানে। কোন গ্রাহকের কখন কি প্রয়োজন পড়বে বলা যায় নাকি। এছাড়া এল-আই-সি, শেয়ার মার্কেটে উতপটাং পয়সা রোজগারের ফন্দি-ফিকির জানে ধড়িবাজ ভদ্রলোক।
ওদের দিন চলে যায় বেশ ভালভাবেই। বিপদে পড়ে এসে হাজির হয়েছে দূরের খুড়তুতো বোন, ফেলতে পারেনি দিদি সুমালী। তবে পরিষ্কার বলে দিয়েছে বোনকে, নিজের কাজের জায়গা থেকে সে যেন খবরদার ছুটি নিয়ে, বাড়িতে বসে সময় না কাটায়। তাতে সুমালীর ঘোর আপত্তি। মেনে চলবে সে কথা, তাকে কথা দিয়েছে বাসন্তি।
এই কারণেই কি রোববার দিনের ছুটির কথাটা শুনে মেয়েটার মুখ কালো হয়ে এসেছিল! অথচ এ হুকুম তো খোদ বাড়ির বাবুর ও শ্বশ্রুমাতার। রোহিণী চাইলেও ব্যাপারটা বদলাতে পারবে কি?
সোম থেকে শুক্র মন্দ কাটেনি। দু-চার’খানা গাছপালা যা রোহিণী বারান্দার টবে পেলে-পুষে রাখে তাতে বেশ ফুল এসেছে। বসে বসে যখন কাজ খুঁজে পায় না বাসন্তী, তখন পড়ে থাকা খুরপিটা নিয়ে মাটি নেড়েচেড়ে দেয় গাছগুলোর, জলও দেয় নিয়ম করে সকাল বিকেল। ফেলে আসা নিজের সংসারে রান্নাঘরের বাইরে সাধের কারিপাতা গাছটার কথা মনে পড়ে তার। আজকাল নয়নতারার ফুল দিয়ে নিয়মিত পুজো করেন মোহিনীবালা। তুলসী গাছটাও এবার হাত–পা ছড়িয়ে
‘লম্বা হবো’ বলে উঠে পড়ে লেগেছে মনে হচ্ছে রোহিণীর। পিপলুর জন্য বিকেলের পর তুলসীপাতার রস তৈরি করা শুরু হয়েছে। কাশিও সেরেছে এতদিনে।
শনিবার বিকেলে পরদিনের ছুটির কথাটা বাসন্তীকে আর একবার মনে করিয়ে দিলো রোহিণী। মেয়েটা কথাটা শুনে চট করে মাথাটা নীচু করে ফেলল। তারপর মুখ তুলে কী যেন বলতে গিয়েও আর বলল না। উফ, বাঁচা গেছে,
মনে মনে বলে ও চলে যাওয়ার পর রোহিণী দরজাটা বন্ধ করল ।
সারা সপ্তাহটা শেষ হলে রোববারটা শুরু করার সময় একটু ধুমধাম করতে ইচ্ছে হয়। দিনটা শেষও তো হয়ে যায় হুস করে। রোহিণী এই রোববার মাংসর দো-পেঁয়াজি বানানোর প্রোগ্রাম করে রেখেছে। শাশুড়ির জন্য কাঁঠালের তরকারি, নারকেল দিয়ে ছোলার ডাল, পোস্তর বড়া। বিকেলে ওরা সবাই মিলে ঘুরতে গিয়েছে পাশের নতুন মলটায়। বেশ কিছুদিন পর বাইরে বেরোতে একটু অস্বস্তি বোধ করলেও খানিকক্ষণ পরেই বেশ খুশি বোধ করেছেন মোহিনীবালা। মলে পৌঁছে পিপলুর তিড়িং-বিড়িং তো দেখার মত। গোটা পরিবার খুশিতে ভরপুর হয়ে বাড়ি ফিরেছে। সিঁড়িতে তাদের হইচই শুনে সামনের ফ্ল্যাটের সাজুগুজু ‘খুকি’, মিসেস গুজরালও দরজা খুলে উঁকি মেরেছে। পিপলুর হাতে বেলুন দেখে ন্যাকামি করে বলল, ‘ও,
ছো ছুইট ছোটু, আমায়ও একটা দাওনা’। আজ অবশ্য রোহিণীর পরনে বাঁধনির লাল-হলুদ সালোয়ার কামিজ,
কানে অ্যান্টিক সিভারের ছোট্ট ঝোলা দুল, চোখে অল্প কাজলের লালিত্য আর ঠোঁটে লিপস্টিকের ছোঁয়া। সচেতনভাবে মুচকি হেসে প্রচুর আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফ্ল্যাটের তালা খুলতে খুলতে সে মজা করে বলে উঠল, ‘সবগুলোই দিয়ে দাও না পিপলু সোনা, আন্টি এখনও এগুলো দিয়েই খেলতে পছন্দ করে । তুমি তো বড় হয়ে গেছ”।
পরদিন,
অর্থাৎ সোমবার সকালে আধঘন্টা দেরি করে এলো বাসন্তী। সাধারণতঃ মেয়েটা সময়মতই আসে। একটু চিন্তা করতে শুরু করেছিল সবে রোহিণী। তখনই পৌঁছল সে, সেই ফিটফাট সাদা শাড়ি, কপালে টিপ। কিন্তু চোখের নীচে একটা কাটা দাগ দেখা যায় যেন, আর কপালের বাঁ দিকে একটা কালশিটে কি? কারণ জিজ্ঞেস করতে বিশেষ কোনো সদুত্তর দিল না বাসন্তী। শুধু মাথা নীচু করে বিড়বিড় করল একবার, রাতে লোড শেডিং ছিল, বাথরুমে যেতে গিয়ে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে সে।
কী এক অজানা কারণে সারাদিন অফিসে মনটা খচখচ করল রোহিণীর। কিংশুকের সঙ্গে তো মেয়েটার প্রায় দেখা হয়ই না কারণ কিংশুক আরও সকাল সকাল বেরিয়ে যায়। এ ব্যাপারে ওর সাথে কথা বলে বিশেষ লাভ হবে বলে তো মনে হয় না। বাড়ি ফিরে দেখল পিপলুর সঙ্গে খেলতে ব্যস্ত বাসন্তি। মোহিনীবালা সোফায় বসে ব্যাপারটা দেখছেন, খুব উপভোগও করছেন। একটু কি খুঁড়িয়ে হাঁটছে মেয়েটা, চোটটা বোধ হয় ভালোই লেগেছে। রোহিণী খুঁজে পেতে একটা ডিসপ্রিন ট্যাবলেট পেয়ে তাকে খাইয়ে দিল বিকেলের চা-বিস্কুটের সাথে।
আগামী সংখ্যায় সমাপ্য
0 মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন