কবিতাঃ
খাই খাই বুড়ো
সত্যজিৎ
আজকে আমি বলছি এক
লোভী বুড়োর কথা,
চকচকে টাঁক সাথে নিয়ে
এত্তবড় মাথা ।
গাল ভর্তি দাড়ির বন
সযত্নেতে থাকত,
মাছির ভয়ে সকাল সাঁঝে
কাপড় ঢেকে রাখত ।
খাটো ধুতি গামছা গলায়
রোমশ ভুঁড়ি নিয়ে,
ভোর বেলাতেই আসতো বুড়ো
পুকুর থেকে নেয়ে ।
খাবার ছাড়া আর কিছু নয়
হেঁশেল ঘরের নেতা,
লোভী সে যে ভীষণ রকম
করতো গরম মাথা ।
সাতসকালেই মণ্ডা মিঠাই
সরস মিহিদানা,
প্রাতরাশে বাদ ছিলনা
রাবড়ি পায়েশ ছানা ।
একটু বেলায় অল্প করে
খান পঞ্চাশ লুচি,
কোনমতেই কমছে না তার
আহারের সূচী ।
মধ্যাহ্নভোজ বেশ জম্পেশ,
মাংস ভাত আর দই,
ভাজা মাছটা সঙ্গে থাকে
ট্যাংরা পুঁটি কই ।
খাই আর খাই শুধু
চিন্তা পেটের নাই,
পাশে বসেই কালো বেড়াল
ঠোঁট চাটত বৃথাই ।
খাওয়ার পরেই দড়ির খাটে
লম্বা সটান ঘুম,
নাকের ডাকে বাজত সানাই
রেগে সবাই খুন ।
ঘুমের পরে বিকেলবেলা
মুড়ি আলুভাজা,
কাঁচালঙ্কার আচার সাথে
দু ঘটি দুধ তাজা ।
নৈশভোজের বর্ণনা আর
নতুন দেবো কি,
সকাল দুপুর একই সাথে
বাদ-টা আছে কি ?
এমন করেই থাকত বুড়ো
ছেলে বউয়ের সাথে,
বাকি সবাই থাকত খিদেয়
হুঁশ ছিল না তাতে ।
একদিনেতেই এত খাওয়া
জ্বালায় মরে সবাই,
বাড়িশুদ্ধ লোকের চিন্তা
আমরা কোথায় যাই ।
দিনের পর দিন আর
রাতের পরে রাত,
পেটপূজার নাই যে বিরাম
খাচ্ছে পেড়ে পাত ।
হঠাৎ সেদিন বসলো বুড়ো
মেঝেয় মাদুর পেতে,
সাধ জেগেছে তালের বড়া
খান শয়েক খেতে ।
রাতদুপুরে নাছোড়বান্দা
আর সয়না বাপু,
সবাই বুড়োর অতিষ্ঠতে
বেজায় রকম কাবু ।
“ এখন বাবা তাল নয়
রয়েছে পাটিসাপটা ” ,
ঘোমটা টেনে বউ বলল
সহজ সোজাসাপটা ।
বায়না বুড়োর খেতেই হবে
মিষ্টি তালের বড়া,
রাতদুপুরেই ছুটল বুড়ো
ডিঙ্গিয়ে কাঁটার বেড়া ।
সকাল হল অপেক্ষাতেই
বুড়োর দেখা নাই,
মনের দুঃখে হাত গালে
ভাবছে বসে সবাই ।
অনেক পরে ফিরল বুড়ো
দুহাত ঢেকে মুখ,
উদাস হয়ে বসলো এসে
মনে বেজায় দুখ ।
ছেলে জিগায় “ কি হয়েছে”?
বুলিয়ে মাথায় হাত,
ইশারাতে বলছে বুড়ো
‘ নেই যে মুখে স্বাদ’ ।
ছুটতে গিয়ে হুমড়ে পড়ে
জিভ কেটেছে গোড়া থেকে,
জন্মের মতো ঘুচল যে তার
ভুরিভোজের সাধ ।
0 মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন