দিয়ার ডায়েরি
পারমিতা চ্যাটার্জী
দিয়ার ডায়েরি লেখা কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি বাকি থেকে অনেক প্রিয় অপ্রিয় ঘটনাসমূহ
যা দিয়া লিখতে চায় না যা তার অন্তরে গভীর এক ক্ষতের সৃষ্টি করে বসে আছে, তবু মাঝে মাঝে একান্ত নিরালা
সন্ধ্যায় ভিড় করে সেই জমা কথাগুলো এসে হাজির হয়, অমনি চোখ
দিয়ে ফোঁটা ফোটা জল বেরিয়ে আসে, অকারণ অভিমানে মন ভার হয়ে
যায়, কেন বাপু যা ঘটে গেছে তা নিয়ে আর চর্বিত চর্বণ করে কী
হবে তার চেয়ে সামনে এগিয়ে গিয়ে জয়ের মালাটা পরে নিলেই তো হয়, তুমি নিজে খুব ভালো করে জান সবাই তোমায় রান্নাঘরে পুরে দিয়ে বলেছিল এটাই
তোমার জগত এর বাইরে আর কিছু যেন চাইতে যেও না এটাই মন দিয়ে কর, তাই ২৫শে বৈশাখ সকাল বেলায় তুমি ভালো গান কর কবিতা বল জেনেও তোমায় কিছু না
বলে তোমার দুই ননদ তোমার শ্বশুর বাড়ির সবাই গেল সেই অনুষ্ঠানে রবিপক্ষে গান গাইতে
চলে গেল, যাবার সময় সবাইকে যে যেমন জলখাবার খাবে খাইয়ে
পাঠালে, তোমাকে কেউ যেতে বলেনি, বলবে
কি করে রান্নার ঠাকুর যে তোমার বড় জ্যাঠশ্বশুরের সাথে ঝগড়া করে কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে
গিয়েছে, তোমাকেই তো এতো লোকের রান্না করতে হবে
তোমার শ্বশুরমশাই জামাই খাবে বলে দু রকম মাছ মাংস সব এনে রেখেছেন রান্নার
ব্যাবস্থা করতে হবে,
তা হোক না তোমার বয়স ২২/২৩ বাড়ির বউ তো বটে, মেয়ে
হলে না হয় ছেলেমানুষ আখ্যা পেতে, বউ তো বউই তাই তোমার চেখের
ধারা শ্রাবণ, মনে একরাশ অভিমানের মেঘ জমে থাকলেই বা কার কী
করার আছে, কাজটা তো করতে হবে। তাই তুমি চোখের জল চেপে মন
দিয়ে সব রান্না করে গেলে, তার মধ্যেই কোলের মেয়েটার সময়ে চান
খাওয়া শোওয়া সবই করলে, তুমি খেয়েছ কি না সে কথা তেমাকেই
ভাবতে হবে, যতই ভাব এ ভাবে বেঁচে থেকে লাভ কি? পারবে কি মরতে? সুন্দর ছোট ফুটফুটে মেয়েটাকে ফেলে
মরে যেতে? পারোনি তাই বেঁচে থাকতেই হয়েছিল এক নিরানন্দ তিনতলা
বাড়ির একটা বড় ঘরে, মেয়ের সুন্দর মুখের দিকে চেয়ে দিন গুণে
গেছ, অশ্রু মুছেছ, আর ভেবেছ এ মেয়ে
আমার বড় হলে অনেক না পাওয়া পেয়ে যাব, এখন জীবন যে দিকে নিয়ে
যাবে সে দিকেই যাই।
ক্রমশ
0 মতামত:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন