চিলেকোঠা ওয়েবজিনের
তরফ থেকে আমাদের সদস্যা পারমিতা চ্যাটার্জির
মুখোমুখি আজ আমি ইন্দ্রাণী
মুখার্জি ।
ইন্দ্রাণী….
শুভ সকাল পারমিতা। এই যে আজ চিলেকোঠা ওয়েবজিন থেকে তোমার সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে তাতে তোমার কিরকম অনুভূতি হচ্ছে?
পারমিতা….
আমার ভীষণ ভালো লাগছে। আমার যে কোনদিন সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে সেটা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। নিতান্তই গৃহবধূ আমি সেই জায়গা থেকে যে আমাকে এমন একটা সম্মান দেওয়া হল সেটা আমার কাছে বিরাট একটা প্রাপ্তি।
ইন্দ্রাণী….
একদম ছোটবেলা থেকে শুরু করা যাক ।
তোমার ছোটবেলার কথা কিছু বল ।
পারমিতা….
শৈশব আমার খুবই ভালো কেটেছে। শৈশবের কথা বলতে গেলে আমার বাবার কথাই বলতে ইচ্ছে করছে । আমার বাবা শ্রী সন্তোষ কুমার অধিকারী ছিলেন আমার জীবনের খোলা জানলার মত ।
তখনকার দিনের খুব নামকরা সাহিত্যিক ছিলেন বাবা । সেইসময়ের বিভিন্ন নামকরা পত্রিকায় নিয়মিত লেখা বেরত বাবার। পরবর্তীতে কেবল মাত্র বিদ্যাসাগর গবেষণায় ডুবে গেছিলেন তিনি ।
মনে পড়ে ছোটবেলায় বাড়ির বৈঠকখানায় অনেক বড় বড় মানুষ আসতেন। অন্নদাশংকর রায় আশা পূর্ণা দেবী চিত্রীতা দেবী অজিতকৃষ্ণ বসু প্রেমেন মিত্র প্রমুখ ।
সাংস্কৃতিক পরিবেশের মধ্যেই বড় হয়েছি আমি।আমার এক দিদি আর এক দাদা। সবার ছোট বলে আদর স্নেহ আমারই বেশি প্রাপ্তি হয়েছে। দিদি দশ বছরের আর দাদা ন’ বছরের বড়। দিদির বিয়ে হয়ে যাওয়া আর দাদার বাইরে পড়তে চলে যাওয়ায় আমি একমাত্র সন্তানের মতো উজার করা ভালবাসার ছায়ায় বড় হয়ে উঠেছিলাম ।
ইন্দ্রাণী….
বাঃ খুব ভালো। আচ্ছা এই যে তুমি কবিতা লেখ তার প্রেরণা কি তোমার বাবা?
পারমিতা….
একদম একশো ভাগ । বাবার কাছ থেকেই আমি কবিতাকে জানতে ভালবাসতে শিখেছি । রবীন্দ্রনাথ কে চিনেছি তাঁর গান কবিতা বুঝতে শিখেছি। সাহিত্যের আঙিনার সব কিছু ভাবনা চর্চা লেখা সব কিছু আমার বাবার জন্য ।
ইন্দ্রাণী….
কবিতা লেখা গল্প লেখা গান গাওয়া কত গুনী তুমি । তোমার আর কোন শখ বা হবি?
পারমিতা….
গান করা বই পড়া লেখা এগুলো ই
আমার হবি । এছাড়া রান্না করতে খুব ভালোবাসি। একসময়ে মেয়েদের বড় করাটাও একটা নেশা ছিল জান। আমার দুই মেয়ে যাতে সুন্দর শিক্ষা সংস্কৃতিতে বড় হয়ে ওঠে পায়ের তলায় যাতে শক্ত মাটি পেয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে তার জন্য আমি অনেক সময় ওদের দিয়েছি । ওই সময় ওটা ও একটা হবি বা নেশা বলতে পার ।
ইন্দ্রাণী।…. খুবই ভাল লাগছে তোমার কথা শুনতে যদি এবার একটু বিবাহিত জীবনের কিছু কথা বল ।
পারমিতা…. বিবাহিত জীবনের শুরু টা বেশ ভালোই হয়েছিল । বড় ব্যবসায়ী পরিবারে বিয়ে হয় আমার। বাড়িতে গান বাজনা সাহিত্যের চর্চা ছিল। একদম জমজমাট পরিবেশ ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে আসা ঝড় সব ওলটপালট করে দিল ।বিয়ের সাত মাসের মাথায় শাশুড়ি মা মারা যান । স্নেহময়ী মা সংসার টা কে আগলে রাখতেন । কিন্তু উনি মারা যাবার পর সব দায়িত্ব আমার ওপর এসে পড়ায় আমি খুব বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি । যদিও স্বামী খুব কেয়ারিং ছিলেন এবং তিনি এখন ও
খুবই কেয়ারিং। কোন কাজে বাধা দেননা বরং উৎসাহ দেন । আমি আমার ইচ্ছে কে গুরুত্ব দিতে পারি সচ্ছন্দে। এটাই তো অনেক পাওয়া তাই না?
ইন্দ্রাণী….
শুনেছিলাম তোমার একটা বুটিক ছিল?
পারমিতা। হ্যাঁ আমার একটা বুটিক ছিল। পারমিতাজ ক্রিয়েশন । বর্তমানের চতুষ্পর্ণী সানন্দা সুখী গৃহকোণে নিয়মিত প্রতিবেদন বেরত। দশ বারো বছর সম্মানের সঙ্গে চলেছে ।
তিন চারশ কাস্টমার ছিল আমার। অনেকে এমন ও ছিল যারা পারমিতাদির বুটিক ছাড়া শাড়ি পরত না ।
এটাও আমার একটা বিরাট পাওনা বলতে পার ।
ইন্দ্রাণী….
তা বন্ধ করলে কেন?
পারমিতা…. বন্ধ করলাম কারণ প্রথমত আমার শরীর খুব খারাপ হয়ে গেলো, তারপর আমার বড় মেয়ের কোলে আমার নাতি গোগোল এল । বড় মেয়ে দুবাই আর ছোট মেয়ে ব্যাঙ্গালোরে থাকে ।
তাদের কাছে আমায় যেতে হয় মাঝে মাঝেই । তাই বুটিকের দিকে সেভাবে নজর দিতে পারছিলাম না ।
ইন্দ্রাণী….
জীবনের এমন কিছু চাওয়া যা এখনও পাওয়া হয়নি?
পারমিতা….
চাওয়া পাওয়া বলতে গেলে সেরকম চাওয়া কিছু না থাকলেও পেয়েছি অনেক বেশি ।
স্বামীকে প্রায় সব ক্ষেত্রেই পাশে পেয়েছি, সে তুমি বুটিক ই বল বা সাহিত্য চর্চা ই
বল । স্বপ্ন ছিল দুই মেয়েকে মনের মতো করে মানুষ করার সেটা আমি করতে পেরেছি। মনে মনে চেয়েছিলাম একটু কবিতা গল্প লিখব পাঁচ জন সেটা পড়বে । সেটা ও ফেসবুকের দৌলতে আর চিলেকোঠার সহযোগিতায় করতে পারছি । খুব শখ ছিল নিজের লেখা বই বেরোবে তা সেটা ও একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে সফলতার দিকে। না পাওয়ার কোন ক্ষোভ নেই ।
ইন্দ্রাণী….
তার মানে স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে বল?
পারমিতা…. স্বপ্নপূরণ কতটা হবে জানিনা তবে এগোচ্ছে ।
আমার একটা কবিতার বই বের হয়েছে “ওলো সই” । আর একটি গল্পের বই বইমেলায় প্রকাশ হতে চলেছে “দিয়ার ডাইরি” থেকে । এছাড়া সপ্তপর্ণ, আঁতুড়ঘর, পদক্ষেপ, অসময় এরকম কিছু পত্রিকায় আমার কবিতা স্থান করে নিয়েছে।
ইন্দ্রাণী….
জীবনের এমন কোন স্মরণীয় মুহূর্ত।
পারমিতা…. স্মরণীয় মুহূর্ত বলতে ছোটবেলার ইস্কুলের কথা মনে পড়ে গেল, আমি পড়তাম সাখওয়াত মেমোরিয়াল স্কুলে। তখন বারো ক্লাসে পড়ি । সেইসময়ে ইস্কুলে একটি আবৃত্তি প্রতিযোগীতা হয় ।
আমি সেখানে রবীন্দ্রনাথের দুঃসময় কবিতাটি আবৃত্তি করে প্রথম হই । জাজ হয়ে এসেছিলেন শ্রী অন্নদাশংকর রায়। তিনি ছিলেন আমার বাবার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পুরস্কার গ্রহণ করে যখন ওনাকে প্রণাম করে বলি যে আমি সন্তোষ অধিকারীর মেয়ে তখন উনি আমার মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন সেই জন্যই তুমি এত সুন্দর করে কবিতা বললে । সব বন্ধুদের সামনে দিদিমণিদের সামনে সেদিন আমার খুব ভালো লেগেছিলো। গর্বে আমার মাথা উঁচু হয়ে গেছে মনে হচ্ছিলো ।
এটা আমার জীবনের একটা চিরস্মরণীয় মুহূর্ত ।
ইন্দ্রাণী…. এবার শেষ প্রশ্ন । চিলেকোঠা সম্বন্ধে কিছু বল ।
ওয়েবজিন সম্বন্ধে কিছু সাজেশন থাকলে সেটা ও
বল।
পারমিতা…. চিলেকোঠা সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমে ইন্দ্রাণী তোমার কথাই বলতে হবে আমাকে। চিলেকোঠার মত রুচিশীল সুন্দর একটা গ্রুপে তোমার হাত ধরেই আমার আসা ।
সেজন্য তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ । তুমি ছাড়া আর একজনের সহযোগিতায় আমি চিলেকোঠায় পরিচিতি পাই সে হল আহুতি ভট্টাচার্য । আহুতি কে আমি আগে থেকেই চিনি ।
তোমাদের আন্তরিক আমন্ত্রণে আমি প্রথম মহালয়ার দিন অনুষ্ঠানে যাই এবং সকলের সাথে আলাপ করে খুব ভালো লাগে । এছাড়া নুপুর বড়ুয়া নন্দিনী লাহার জন্য আমি ওয়েবজিনে লেখা দিতে পারি। ওদের উৎসাহ আমাকে লিখতে সাহায্য করে। ভীষণ ভালো লাগে চিলেকোঠা কে ।
ঠিক যেন একটা একান্নবর্তী পরিবার। সব শেষে ধন্যবাদ জানাই চিলেকোঠার সকল এডমিনদের কালচারাল এডমিনদের কোর কমিটির সদস্যদের সকলকে আমার ধারাবাহিক লেখার জন্য পুরস্কার দিয়ে আমাকে সম্মানিত করার জন্য । আমার মত সাধারণ একজন মানুষের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য।এগিয়ে চলুক চিলেকোঠা তার নিজস্ব গতিতে। আমি চিলেকোঠার সদস্যা হিসেবে গর্বিত। সকল সদস্যদের জন্য অনেক শুভকামনা আর ভালবাসা জানাচ্ছি । এই মুহূর্তে আমার কোন সাজেশন নেই।
ইন্দ্রাণী….
ধন্যবাদ পারমিতা ।
তোমার অমূল্য সময় আমাদের দেবার জন্য ।
খুব ভালো থেকো তুমি। তোমার জন্য ও
চিলেকোঠার অনেক শুভেচ্ছা রইল ।
khub valo laglo...
উত্তরমুছুন